শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১০:০৭ পূর্বাহ্ন
প্রথম আলো: বিভিন্ন বিষয় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে সম্প্রতি উত্তেজনার পারদ চড়েছে। এই অবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু বিতর্কিত জলসীমা দক্ষিণ চীন সাগরের আশপাশে সামরিক শক্তি বাড়ানোর পাশাপাশি প্রাকৃতিক সম্পদের আধার ওই জলসীমার বেশির ভাগ এলাকাকে বেইজিংয়ের মালিকানার দাবিও খারিজ করে দিয়েছে ওয়াশিংটন। পর্যবেক্ষকেরা আশঙ্কা করছেন, উত্তপ্ত এই পরিস্থিতিতে দেশ দুটির মধ্যে সামরিক সংঘাতের ঝুঁকি বেড়েছে।
গত সোমবার বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেন, চীন যে দক্ষিণ চীন সাগরের অধিকাংশ এলাকা নিজেদের দাবি করে থাকে, যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে এর বিরোধিতা করছে। ওই অঞ্চলের বিতর্কিত জলসীমাগুলোয় যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের সার্বভৌমত্ব দাবি করে না। তবে পম্পেও মিসচিফ রিফ ও সেকেন্ড টমাস শোয়ালে বেইজিংয়ের সার্বভৌমত্ব দাবিকেও প্রত্যাখ্যান করেছেন।
পম্পেও বিবৃতিতে বলেন, ‘দক্ষিণ চীন সাগরকে চীনের নৌ–সাম্রাজ্য হিসেবে ব্যবহার বিশ্ব কখনো মেনে নেবে না।’ যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপকে ‘ভিত্তিহীন’ দাবি করেন চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান। যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপকে বেইজিং ও দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বিবাদ বাধানোর কৌশল হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের এই হীন উদ্দেশ্য সফল হবে না বলেও জানান ঝাও লিজিয়ান।
ঝাও মঙ্গলবার আরও বলেন, চীন কোনো নৌ–সাম্রাজ্য গড়তে চাচ্ছে না। চীন তার প্রতিবেশী দেশগুলোকে সমতার ভিত্তিতে মূল্যায়ন করে। সেই সঙ্গে দেশগুলোর প্রতি অত্যন্ত সংযম প্রদর্শন করে। দক্ষিণ চীন সাগরে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য উল্টো যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করেন ঝাও।
চীনের হাইনান প্রদেশের গবেষণা প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর সাউথ চায়না সি স্টাডিজের সহকারী গবেষক চেন জিয়াংমিয়াও বলেন, ‘পম্পেও যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাতে স্পষ্ট হয়ে গেছে, যুক্তরাষ্ট্র একটি পক্ষ নিয়ে ফেলেছে। যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান খুবই পরিষ্কার। আমরা প্রায়ই বলে থাকি, সার্বভৌমত্বের বিতর্কে যুক্তরাষ্ট্র কোনো পক্ষ নেয়নি। কিন্তু পম্পেওর বিবৃতিতে চীনের ভূখণ্ডের দাবিকে নাকচ করে দেওয়া হয়েছে। দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার দ্বন্দ্ব স্বায়ুযুদ্ধের কাছাকাছি নিয়ে গেছে।’
বাণিজ্য বিতর্ক থেকে শুরু করে করোনাভাইরাস মহামারি, মানবাধিকার ও হংকংয়ে জাতীয় নিরাপত্তা আইন প্রশ্নে বিশ্বের দুই ক্ষমতাধর দেশের মধ্যে যে উত্তেজনা এত দিন বিরাজ করছিল, চীন দক্ষিণ সাগর বিতর্কে ওয়াশিংটনের অবস্থানকে সেটা আরও খারাপ করে তুলবে। চলতি মাসের আগের দিকে চীন যখন বড় ধরনের সামরিক মহড়া করছিল, ঠিক তখনই পাল্টা সামরিক মহড়ার কথা বলে দক্ষিণ চীন সাগরে দুটি বিমানবাহী রণতরি ইউএসএস রোনাল্ড রিগ্যান ও ইউএসএস নিমিটজ পাঠায় যুক্তরাষ্ট্র। সেখানে আগে থেকে আরও চারটি মার্কিন যুদ্ধজাহাজ রয়েছে।
চীনের জিনান ইউনিভার্সিটির দক্ষিণ চীন সাগরবিষয়ক বিশেষজ্ঞ ঝাং মিংলিয়াং বলেন, বিতর্কিত জলসীমাকে কেন্দ্র করে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের শত্রুতা এবং ওই অঞ্চলে দেশ দুটির সামরিক কার্যক্রম বৃদ্ধি উত্তেজনাকে একটি ভয়ংকর পর্যায়ে নিয়ে গেছে।
.coxsbazartimes.com
Leave a Reply